সোনালি আঁশখ্যাত ফসল পাটের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ময়মনসিংহের নান্দাইলের কৃষকেরা এখন সোনালি আঁশের স্বপ্ন দেখছেন। অল্প খরচে কম সময়ে বেশি লাভের আশায় উপজেলার কৃষকদের ধান চাষের পাশাপাশি পাট চাষের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। শুরুতেই আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলেও পরবর্তীতে সময়মত বৃষ্টিপাতের কারণে পাটের ফলন ভালো হয়েছে। গত কয়েক বছর যাবৎ পাটের বাজার মূল্য ভালো পাওয়ায় চাষিরা উন্নত জাতের পাট চাষের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। নিবিড় পরিচর্যা আর কৃষি অফিসের পরামর্শের কারণে পাটের তেমন কোনো রোগবালাই নেই।

চলতি মৌসুমে নান্দাইলে বিভিন্ন গ্রাম ও প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের জমিতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ব্যাপকভাবে সোনালী আঁশের আবাদ হয়েছে। দেশে সার, বীজ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ কম ও অনুকূল আবহাওয়া থাকায় সোনালী আঁশের ফলন অধিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের হাট-বাজারে পাটের দাম অধিক ও কম খরচে পাটের অধিক ফলন হওয়ায় সোনালী আঁশের সুদিন ফিরে আসবে বলে মনে করেন স্থানীয় পাট চাষীরা এবং আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তারা।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় বিভিন্ন গ্রাম ও চরাঞ্চলের সমতল ও অসমতল জমিতে এ বছর পাটের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১১৯৫ হেক্টর জমিতে। তন্মধ্যে দেশীয়, তোষা জাত ও অন্যান্য জাতের পাট রয়েছে।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকের মাঠে মাঠে চোখ জুড়ানো সবুজের সমারোহ। সবুজ পাতার সঙ্গে দোল খাচ্ছে মাঠের পর মাঠ কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গত বছরের চেয়ে পাটের বাম্পার ফলন ও ভালো দামের স্বপ্ন দেখছেন এ এলাকার প্রান্তিক চাষিরা।

পাট কাটা, জাগ দেয়া, ধোয়া ও শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। তাদের যেন দম ফেলানোর সময় নেই। পাট শুকানোর পর উপজেলা বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রতিমণ পাট ২ হাজার টাকা হতে ৩ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিমণ পাটখড়ি বিক্রি হচ্ছে ৮ শত টাকা দরে। পাটের ফলন ও ভালো দাম পেয়ে চাষিদের মুখে ফুটে উঠেছে স্বপ্ন পূরণের হাসি।

পাট চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বিঘা জমিতে চাষ, সেচ, রাসায়নিক সার প্রয়োগ,পাট কাটা, শুকানোসহ খরচ হবে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। গত বছরের তুলনায় এবার ফলন ও দাম বেশি হওয়ায় অন্য ফসলের তুলনায় লাভ হবে ৫/৬ গুণ। গত বছর বিঘাপ্রতি ৭/৮ মণ পাট পাওয়া গেছে। কিন্তু এবার ফলন ভালো হওয়ায় বিঘাপ্রতি ১০/১২ মণ পাট পাওয়া যাবে। ফলন ও দাম ভালো পেয়ে চাষিদের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা দিয়েছে।

উপজেলার লক্ষিপুর গ্রামের পাট চাষী আ. কাদির, রশিদ, মালেক, শহীদ, শামছ উদ্দিন, হাসিম উদ্দিন, চরউত্তরবন্দ গ্রামের জামাল উদ্দিন, মুজিবুর রহমান, বীরকামট খালী গ্রামের আলাল, সমেদ আলী, চরকোমরভাঙ্গা গ্রামের মো. আলী শিকদার, রসুল শিকদার সহ অনেকেই জানান, অন্যান্য কৃষি ফসলের তুলনায় পাটের আবাদে খরচ কম হয়। পাটের বাজার দামও বেশি। তাই আমরা এই বছর অধিক জমিতে পাটের আবাদ করেছি।

নান্দাইল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার নাদিয়া ফেরদৌসি পাটের দাম সন্তোষজনক অবস্থা বিরাজ করায় উপজেলায় পাটের সুদিন ফিরে আসবে বলে জানান তিনি।

নান্দাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান বলেন, আমরা কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ, প্রশিক্ষণ ও মাঠ পর্যায়ে দেখাশোনা করায় ফলন ভালো হয়েছে। এছাড়া সরকারি বিভিন্ন প্রণোদনা ও ভর্তুকী কৃষকদের মাঝে পৌঁছে দেওয়ায় তারা আরও বেশি উদ্ভুদ্ব হয়েছে। বর্তমানে বাজারে পাটের চাহিদা ও মূল্য বৃদ্ধির কারণে পাট চাষ দিন দিন বাড়ছে।(অলোকিত বাংলাদেশ)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *