সংক্রমণ বিবেচনায় ‘রেড জোন’ (লাল বা বিপদজনক এলাকা) ঘোষণা করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এলাকাভিত্তিক ভিন্নমাত্রার লকডাউন ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আর লকডাউন হওয়া এলাকাগুলোতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হবে বলেও জানা গেছে।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শুক্রবার সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক সভায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সভা সূত্রে জানা গেছে। সভায় কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, মেয়র, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, চাকরিজীবীদের দুশ্চিন্তামুক্ত রাখতেই লকডাউন করা এলাকায় সাধারণ ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ১ জুন সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক সভায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিবেচনায় দেশের বিভিন্ন এলাকাকে লাল, হলুদ ও সবুজ এলাকায় ভাগ করে ভিন্নমাত্রায় এলাকাভিত্তিক লকডাউন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। অধিক সংক্রমিত এলাকাকে বিশেষ ভাবে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার বিষয়ে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সম্মতি দিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব রাজাবাজারে গত মঙ্গলবার রাত ১২টার পর থেকে লকডাউন শুরু হয়। কড়াকড়িতে শুক্রবার তৃতীয় দিন পার হলো।
এর মধ্যেই শুক্রবার দেশের করোনা মহামারির সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এলাকাভিত্তিক লকডাউন বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে অংশ নেওয়াদের একজন প্রথম আলোকে বলেন, সংক্রমণ বেশি থাকা আরও বিভিন্ন এলাকায় শিগগির লকডাউন হবে। তবে ওই সব এলাকার নাম বেশি আগে ঘোষণা দেওয়া হবে না। আগ মুহুর্তে নাম ঘোষণা করা হবে। কারণ বেশি আগে ঘোষণা করলে ওই এলাকার অনেক মানুষ এমনকি আক্রান্ত ব্যক্তিরাও অন্যত্র চলে যেতে পারে, যা ঝুঁকি বাড়বে। আর যেহেতু এখন লকডাউন এলাকায় বাজার-সদাইসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রাখা হচ্ছে, ফলে আগ মুহুর্তে ঘোষণা করলেও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
এ ছাড়া শক্ত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে একটি এলাকার কেবল বেশি সংক্রমিত অংশকেই লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ।
বৈঠকে অংশ নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, পুরো ওয়ার্ড না করে কোনো ওয়ার্ডের যে অংশে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ বিপদজনক বা রেড মাত্রায় পৌঁছেছে, শুধু সেই এলাকায় লকডাউন করলে কাজের চাপ কম হবে। আর সারাদেশে যখন এলাকাভিত্তিক লকডাউন ঘোষণা করা হবে তখন সব জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ন্যস্ত করা কঠিন হয়ে পড়বে। সে জন্য জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে এটি কার্যকর করা সহজ হবে। ত্রাণবিতরণসহ বিভিন্ন সময়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের নিয়ে উপজেলা পর্যায়ে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেই কমিটিগুলোকে সক্রিয় করে লকডাউনের বিধিবিধান বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিলে তা অধিক কার্যকর হবে বলে মনে করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী। এ ছাড়া এসব এলাকায় গুরুতর অসুস্থ রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার জন্য ‘অ্যাম্বুলেন্স সেল’ করে তাৎক্ষণিক সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই কনফারেন্সে অংশ নেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ , জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউসসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ( প্রথম আলো )